Trump Tariff

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে কড়া সুরে বার্তা দিয়েছেন। এবার তাঁর নিশানায় ভারতীয় চাল। হোয়াইট হাউসে কৃষি খাতের প্রতিনিধি এবং গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ভারত নাকি আমেরিকায় “ডাম্পিং” করছে। এই প্রসঙ্গেই উঠে আসে trump tariff নিয়ে নতুন হুমকির কথা। ট্রাম্প বলেন, প্রয়োজনে আরও শুল্ক চাপিয়ে এই সমস্যার সহজ সমাধান করা সম্ভব।

এই বৈঠকেই মার্কিন কৃষকদের জন্য ১২ বিলিয়ন ডলারের একটি ফেডারাল সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণাও করা হয়। ট্রাম্পের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, আসন্ন নির্বাচনের আগে কৃষক ভোটব্যাংককে সন্তুষ্ট রাখাই তাঁর মূল লক্ষ্য। তবে বাস্তব বাণিজ্য পরিসংখ্যান বলছে, এই trump tariff হুমকির আসল চাপ পড়তে পারে উল্টো মার্কিন ভোক্তাদের ওপর।

বর্তমানে ভারত থেকে আমেরিকায় রফতানি হওয়া পণ্যের উপর প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা বিশ্বে অন্যতম উচ্চ হার। তার মধ্যেও ভারতীয় চাল বিশেষ করে বাসমতী চাল আমেরিকার বাজারে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ধরে রেখেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবর্ষে ভারত যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩৯২ মিলিয়ন ডলারের চাল রফতানি করেছে, যা ভারতের মোট চাল রফতানির মাত্র ৩ শতাংশের কাছাকাছি। এর মধ্যে প্রায় ৮৬ শতাংশই প্রিমিয়াম বাসমতী চাল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এত কম অংশীদারিত্ব থাকা সত্ত্বেও trump tariff নিয়ে এত হইচই আসলে রাজনৈতিক কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। ভারতের অন্য বড় বাজার যেমন পশ্চিম এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপীয় দেশগুলোতে চালের চাহিদা স্থিতিশীল রয়েছে।

বাণিজ্য বাস্তবতা বনাম রাজনৈতিক বক্তব্য

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব স্পষ্টভাবে বলেছেন, ট্রাম্পের এই হুমকি বাস্তব বাণিজ্য যুক্তির উপর দাঁড়িয়ে নেই। তাঁর মতে, আমেরিকায় ভারতীয় চালের রফতানি এতটাই সীমিত যে নতুন করে শুল্ক চাপালেও ভারতীয় রফতানিকারকদের বড় ক্ষতি হবে না। বরং এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে আমেরিকার সাধারণ মানুষের ওপর।

কারণ মার্কিন বাজারে ভারতীয় চাল মূলত দক্ষিণ এশীয় এবং গালফ অঞ্চল থেকে আসা অভিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে জনপ্রিয়। বিশেষ করে বিরিয়ানি, পোলাও কিংবা ঐতিহ্যবাহী নানা পদে বাসমতী চালের বিকল্প নেই। আমেরিকায় উৎপাদিত চালের সঙ্গে ভারতীয় বাসমতীর স্বাদ, ঘ্রাণ এবং দানার লম্বা আকৃতির কোনও তুলনাই চলে না।

এই অবস্থায় trump tariff বাড়ানো হলে আমেরিকার খুচরো বাজারে চালের দাম আরও বাড়বে। ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে, শুল্ক বৃদ্ধির বেশিরভাগ বোঝা মার্কিন ভোক্তারাই বহন করছেন। দোকানে চালের প্যাকেটের দাম বেড়েছে, অথচ ভারতীয় কৃষক ও রফতানিকারকদের আয় প্রায় একই রয়ে গেছে।

একই সঙ্গে ভারতীয় রাইস এক্সপোর্টার্স ফেডারেশনও জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বাজার হলেও একমাত্র বাজার নয়। বিশ্বজুড়ে ভারতের চাল রফতানি সুদৃঢ়ভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ। ফলে trump tariff এর মতো সিদ্ধান্ত ভারতের সামগ্রিক চাল শিল্পকে বড় ধাক্কা দিতে পারবে না।

মার্কিন ভোক্তা ও ভারতের কৃষক, কার ওপর পড়বে বোঝা

ভারতীয় রাইস এক্সপোর্টার্স ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট দেব গর্গ জানান, ২০২৪–২৫ অর্থবর্ষে শুধু বাসমতী চালই আমেরিকায় রফতানি হয়েছে প্রায় ৩৩৭ মিলিয়ন ডলারের, যার পরিমাণ প্রায় ২ লক্ষ ৭৪ হাজার মেট্রিক টন। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমেরিকা বর্তমানে ভারতের বাসমতী চালের চতুর্থ বৃহত্তম বাজার।

নন-বাসমতী চালের ক্ষেত্রেও আমেরিকায় রফতানি হয়েছে প্রায় ৫৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। তবে এই অংশ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গঠনটাই প্রমাণ করে যে ভারতের চাল মূলত বিশেষ চাহিদাভিত্তিক বাজারেই যায়। ফলে trump tariff যতই বাড়ানো হোক, সেই চাহিদা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়।

বাজার পর্যবেক্ষণে আরও দেখা যাচ্ছে, শুল্ক বৃদ্ধির পরও ভারতীয় চালের রফতানি অব্যাহত রয়েছে। কারণ আমেরিকার বহু রেস্তোরাঁ, খাদ্য ব্যবসায়ী এবং আমদানিকারক আগেভাগেই ভারতীয় রফতানিকারকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। ফলে সরবরাহ চেইন পুরোপুরি থেমে যাওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই।

বিশ্লেষকদের মতে, trump tariff নিয়ে ট্রাম্পের এই কড়া অবস্থান মূলত নির্বাচনী প্রচারের অংশ। মার্কিন কৃষকদের সামনে তিনি নিজের কঠোর ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চাইছেন। কিন্তু বাস্তব অর্থনীতিতে এর উল্টো ছবি ধরা পড়ছে। শুল্ক যত বাড়ছে, ততই সাধারণ আমেরিকানদের জন্য চালের দাম বাড়ছে। খাদ্য মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়ছে, যা শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের রাজনৈতিক লক্ষ্যকেই প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে।

ভারতের দিক থেকে দেখলে, চাল রফতানি শিল্প এখনও স্থিতিশীল। নতুন বাজার তৈরি, পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকার দেশে চাহিদা বৃদ্ধি এবং ইউরোপে প্রিমিয়াম বাসমতীর জনপ্রিয়তা ভারতের জন্য বড় সুরক্ষা বলেই মনে করছেন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা।

সব মিলিয়ে বলা যায়, trump tariff নিয়ে যতই উচ্চস্বরে হুমকি আসুক না কেন, এর প্রকৃত আর্থিক চাপ ভারতের চেয়ে অনেক বেশি পড়বে মার্কিন বাজার এবং ভোক্তাদের ওপর। আর এই বাস্তবতাই আগামী দিনে দুই দেশের বাণিজ্য আলোচনায় নতুন মোড় আনতে পারে।

Tags:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *